করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো চলতি বছর ব্যাপক সংখ্যক বিদেশি তীর্থযাত্রীকে পবিত্র হজের অনুমতি দিয়েছে সৌদি আরব। এই অনুমতি দেওয়ার পর শনিবার বিদেশি তীর্থযাত্রীদের প্রথম একটি দল সৌদি আরবে পৌঁছেছে। মহামারির কারণে ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হজ-এর আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ বিদেশিদের জন্য সীমিত করেছিল সৌদি আরব।
সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার তীর্থযাত্রীদের একটি দল শনিবার পবিত্র মক্কা নগরীতে পৌঁছেছেন। আগামী মাসে হজের প্রস্তুতির জন্য পরবর্তী সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলীয় পবিত্র নগরী মক্কায় যাবেন তারা।
রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেল আল-এখবারিয়াকে দেশটির হজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-বিজাবি বলেন, ‘আজ আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে চলতি বছরের তীর্থযাত্রীদের প্রথম দলকে পেয়েছি। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে ফ্লাইট আসবে।’
হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরব পুরোপুরি প্রস্তুত জানিয়ে তিনি বলেন, মহামারির কারণে দুই বছরের বিঘ্নতার পর আজ আমরা সৌদি আরবের বাইরের সৃষ্টিকর্তার মেহমানদের পেয়ে খুশি।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হজ। সামর্থ্য রয়েছে এমন মুসলমানদের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ। বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশগুলোর অন্যতমও হজ। মহামারির আগে ২০১৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সৌদি আরবে অন্তত ২৫ লাখ মুসলিম হজ পালন করতে যান।
কিন্তু ২০২০ সালে মহামারি শুরু হওয়ার পর সৌদি কর্তৃপক্ষ ওই বছর মাত্র ১ হাজার বিদেশিকে হজ পালনের অনুমতি দেয়। পরের বছর করোনা টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়া ৬০ হাজার সৌদি নাগরিক হজের অনুমতি পান। আর এই ৬০ হাজার বাসিন্দাকে হজের জন্য বাছাই করা হয় লটারির মাধ্যমে।
বিদেশি তীর্থযাত্রীদের হজের অনুমতি না মেলায় সেই সময় বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি হয়। কারণ হজে অংশ নেওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে মুসলিমরা অর্থ সঞ্চয় করেন।
চলতি বছর দেশ এবং বিদেশ থেকে ১০ লাখ মুসলিম হজে অংশ নিতে পারবেন বলে গত এপ্রিলে ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। আগামী জুলাই মাসে পবিত্র এই হজ শুরু হবে।
হজের আয়োজন সৌদি শাসকদের জন্যও অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। কারণ ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাদের রাজনৈতিক বৈধতার সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস। মহামারির আগে সৌদি আরবের প্রধান রাজস্ব আসতো হজের আয়োজন থেকে। এই খাত থেকে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাজস্ব আয় করে দেশটি।
চলতি বছর ৬৫ বছরের নিচের মুসলিম তীর্থযাত্রী; যারা করোনা টিকার ডোজ পূর্ণ করেছেন, কেবল তারাই হজে অংশ নিতে পারবেন বলে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তবে সৌদি আরবের বাইরে থেকে যারা যাবেন, তাদেরকে অবশ্যই হজের ভিসার আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে যাত্রা শুরুর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ জমা দিতে হবে।